সুনামগঞ্জ , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মুজিববর্ষ উদযাপনে খরচ ১২৬১ কোটি টাকা পুলিশের নতুন আইজিপি বাহারুল আলম লাখে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় শিক্ষা কর্মকর্তাকে জামালগঞ্জে অগ্নিকান্ডে দুটি বসতঘর পুড়ে ছাই ধর্মপাশায় আসামি গ্রেফতার শহরে ফুটপাত দখল করে দোকানপাট: যানজটে জনভোগান্তি পিকনিক স্পটে দুর্বৃত্তদের হামলা ও ভাঙচুর ৭০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ তুমি যে চেয়ে আছ আকাশ ভরে আ.লীগের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নেই : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জামালগঞ্জে এক পরিবারের ৩ বসতঘর পুড়ে ছাই ব্যাংকের সব শাখায় ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন লেনদেনের নির্দেশ সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ৮ দিনের রিমান্ডে সারদায় প্রশিক্ষণরত আরও তিন এসআইকে অব্যাহতি আ.লীগের পুনর্বাসনে চেষ্টাকারীরা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে : হাসনাত আবদুল্লাহ খেলাপি আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতকে সক্রিয় করছে সরকার সংস্কার শেষে নির্বাচন কোনো যৌক্তিক কথা নয় : মঈন খান ফোকাস এখন একটাই- নির্বাচন : মির্জা ফখরুল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ জিপিএ-৫ শিক্ষার একমাত্র মানদন্ড হতে পারে না : উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

অপরিকল্পিত ফসলরক্ষা বাঁধের কুফল ৭ বছরে নদী গর্ভে বিলীন ৩০ পরিবারের বসতভিটা

  • আপলোড সময় : ০৯-০৯-২০২৪ ০৮:৫৮:২৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৯-২০২৪ ০৮:৫৮:২৬ পূর্বাহ্ন
অপরিকল্পিত ফসলরক্ষা বাঁধের কুফল ৭ বছরে নদী গর্ভে বিলীন ৩০ পরিবারের বসতভিটা
শামস শামীম :: ২০১৭ সালে হাওরের ফসলডুবির পর গ্রামের সামনে নদীর তীরে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প স্থানানন্তরের ফলে প্রায় ৭ বছরে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হতে চলেছে দিরাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গ্রাম জয়পুর। ইতোমধ্যে গ্রামের ৩০টি পরিবারের বসতভিটা বেলা নদীর গর্ভে চলে যাওয়ায় গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন তারা। অন্য যারা আছেন তারাও পাশে মিলনবাজারের কাছে জায়গা কিনে গ্রাম তৈরির জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক কারণে মাটি ভরাট করতে না পারায় নতুন গ্রামের স্বপ্নও বাস্তবায়ি হচ্ছেনা। অন্যদিকে পূর্ব পুরুষের স্মৃতিময় ঐতিহ্যবাহী ভিটা ছেড়ে যেতেও মন সায় দিচ্ছেনা গ্রামবাসীর। সরেজমিন জয়পুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় মিলনবাজার থেকে একটি ডুবন্ত সড়ক জয়পুরের সামন ধরে শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামে এসে মিশেছে। এই সড়ক দিয়েই গ্রীস্মকালীন ৬ মাস এলাকার মানুষ দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় যাতায়াত করেন। বর্ষায় ডুবে যায় সড়ক ও বাধ। গ্রামের পূর্বে উদগল হাওর ও পশ্চিমে ছায়ার হাওর। হাওর ঘেরা বিস্তৃতি গ্রামটির পশ্চিমে মরা নদী বেলা। গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০টি পরিবার বসবাস করেন। গ্রামের পিছনেই ছায়ার হাওরের তীর ঘেষে একসময় এখানে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ হতো। ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জে অকাল বন্যায় হাওরের ফসলডুবির ঘটনা ঘটার পরের বছর এই বাধটি গ্রামের পশ্চিম থেকে খাড়া পূর্বে মরা নদী বেলার তীরে নিয়ে আসা হয়। এখানে উদগল হাওর রক্ষায় একাধিক প্রকল্প দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের বাধ দিয়েই গ্রীস্মকালীন প্রায় ৬ মাস দিরাই-শাল্লা যাতায়াত করেন এলাকাবাসী। গ্রামবাসী জানান, ফসলরক্ষার জন্য এখানে উদগল হাওর প্রকল্পে বাঁধ দেওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। গত ৬-৭ বছরে এই ফসলরক্ষার জন্য অস্থায়ী বাধ নির্মাণ প্রকল্পে অন্তত ৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি বছর বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি। গ্রামবাসী জানান, অপরিকল্পিত এই বাধটি একটি অপ্রয়োজনীয় বাধ। কারণ বেলা নদীটিও মরা। এখান দিয়ে পানি এসে হাওরের ফসল ডোবার কোনও আশঙ্কা নেই। এখানে বাধ হলে যাতায়াতে সুবিধা হয় কয়েকটি গ্রামের। বাধের পরে যখন বোরো ফসল কাটা শেষ হয় তখন বাধটি কেটে দেওয়া হয়। বাধের ভেঙ্গে দেওয়া অংশ দিয়ে পশ্চিমে মাত্র ১৫০-২০০ গজ দূরে জয়পুর গ্রামটিতে গিয়ে আছড়ে পড়ে উদগল হাওরের প্রবল ¯্রােত। এভাবেই ভেঙ্গে যেতে শুরু করে গ্রামটি। প্রতি বছর এভাবেই একই স্থানে অপরিল্পিত বাধ দেওয়ায় বর্ষায় ভেঙ্গে দেওয়ার পর গ্রামের অন্তত ৩০টি বসতবাড়ি ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন তারা। এর আগে গ্রামের পুরনো দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপ্রয়োজনীয় বাঁধের কারণে সরকারের অর্থ অপচয়ের সঙ্গে বসতবাড়ি বিলীন হওয়ায় ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করে বাঁধ এখান থেকে সরিয়ে পূর্বের জায়গায় নিয়ে যেতে অনুরোধ জানান গ্রামবাসী। কিন্তু যাতায়াত স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রকল্প বহাল রাখায় প্রতি বছরই গ্রামের মানুষের বসবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দা সৌমেন চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালের হাওরের ফসল নষ্ট হওয়ার পরই বাধটি গ্রামের পশ্চিম থেকে পূর্বে নদীর তীরে নিয়ে আসায় আমাদের গ্রাম বেশি করে ভাংতে শুরু করে। এই ৬-৭ বছরে আমাদের গ্রামের ৩০টি পরিবার বসতবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। আমরা কয়েকটি পরিবার মিলে পাশে মিলনবাজারের কাছে (নাসিরপুর) পশ্চিমে জায়গা ক্রয় করেছে নতুন গ্রাম তৈরি করার জন্য। তিনি বলেন, যেখানে বাধেরই প্রয়োজন নেই সেখানে বাধ দিয়ে সরকারি অর্থ অপচয়ের সঙ্গে একটি গ্রামকে বিলীন করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আবেদন নিবেদন করেও গ্রামটি রক্ষা করতে পারছিনা। গ্রামের কৃষক তপন দাস বলেন, গত বছর প্রথমে ৮টা, এই বছর সাতটা ঘর ভাংছে। প্রতি বছরই ঘর ভাঙ্গায় মানুষ চলে যাচ্ছে। আমরা যে কয়েকটি ঘর এখনো আছি তারাও আতঙ্কে আছি। গ্রামটি বিলীন হওয়ার পথে। বর্ষায় যখন বাধ ভেঙ্গে দেওয়া হয় তখন পুরো জল আছড়ে পড়ে গ্রামে। তুলোর মতো মাটি উড়িয়ে নেয়। যদি নদীর কোর (ভাঙ্গন কবলিত গভীর অংশ) ভরাট করে দেয় বা বাঁধটি স্থায়ী করে দেয় তাহলে অবশিষ্ট গ্রামবাসীকে রক্ষা করা সম্ভব। গ্রামের কৃষক অরুণ দাস বলেন, আমরা এখনো ২০-৩০টি ঘর কোনও মতে টিকে আছি। রাতে ঘুমাতে পারিনা। যে কোন সময় বসতঘর ভেঙ্গে যেতে পারে। আমাদের যাবার জায়গা নাই। সরকার যদি আমাদের রক্ষা করে তাহলে গ্রামে পূর্ব পুরুষের স্মৃতি নিয়ে থাকতে পারবো। গ্রামের বৃদ্ধা আরতি রানী বলেন, এই গ্রাম ঘিরে অনেক স্মৃতি। আমাদের পূর্ব পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত গ্রামটি চোখের সামনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বসতভিটার সঙ্গে আমাদের মুছে যাচ্ছে আমাদের স্মৃতি ও ঐতিহ্য। আমার ঘর গত বছর ভেঙ্গে গেছে। আমি চৌধুরী বাড়ির পরিত্যাক্ত কাচারি ঘরে আশ্রয় নিয়েছি পরিবার নিয়ে। গ্রামের কিছু লোক পার্শবর্তী গ্রামের পাশে নতুন গ্রামের জন্য জমি কিনলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে যেতে পারছেন না। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মো. ইমদাদুল হক বলেন, বর্ষায় ফসলরক্ষা বাধটি কেটে দেওয়ার পর জয়পুর গ্রামে গিয়ে তীব্র ¯্রােত আছড়ে পড়ে গ্রামের ক্ষতি করছে। এখানে বাধ রাখা না রাখা নিয়ে আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছেন। তাছাড়া গ্রামটি রক্ষায় ভাঙ্গন রোধেও প্রকল্প গ্রহণের চিন্তা ভাবনা করছি আমরা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স